co-authored with Tahneen Jahan Neelam, Abdullah Al Rezwan Fuad and Jafar Sadik Chowhdhury

Illustration: Rats Asif

Many people believe there is a mysterious correlation between what women wear in a public space and how men are “evoked” to harass them sexually. In 2012, on behalf of One Degree Initiative Foundation and Eveteasing Guerilla Bahini, we conducted an extensive study to examine this widely perceived relationship. Our results suggest what we had suspected all along *insert shocking emoticon*. There is no correlation between women’s clothing in public spaces and sexual harassment.

পোশাক মোটামুটি দু’ ধরনের হয়। সাংস্কৃতিক আর ধর্মীয়। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে নারীদের সবচেয়ে পছন্দের পোশাক শাড়ি, একটু কম বয়েসী তরুণীদের পছন্দ সালওয়ার কামিয। আমরা ক’দিন আগে ইভ টিজিং নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিলাম। একটা প্রশ্ন ছিল, আপনি বা আপনার বন্ধু যখন ইভ টিজড হয়েছিল, তখন সে কি পোশাক পড়েছিল? জরিপের ফলাফলে যা উঠে এসেছে তা নীচে দেখুনঃ

eveteasing stats

আগেই বলেছি তরুণী’দের পছন্দের পোশাক হচ্ছে সালওয়ার কামিজ। আর আমাদের জরিপে অংশ নেয়া ৭৪ শতাংশ মানুষের বয়স ছিল ১৮-২৫ বছর। এই বয়সী মানুষের অধিকাংশের পছন্দের পোশাক সালওয়ার কামিজ হওয়াতে জরিপেও সালওয়ার কামিজ পরিহিত অবস্থায় ইভ টিজড হবার ঘটনাও বেশি ঘটেছে। আর একই প্রশ্নে একের অধিক অপশন নির্বাচন করার সুযোগ থাকায় শতকরা হিসাব ১০০ পেরিয়ে গেছে। যেমন ধরুন, কেউ যদি শাড়ি এবং সালওয়ার কামিজ পড়া অবস্থাতেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ইভ টিজড হন, তাইলে সে দুটো অপশনেই টিক মেরেছেন। অশ্লীল পোশাকের কারণেই মেয়েরা টিজড হচ্ছে এই রকম ধারণা যে প্রচলিত আছে, সেই ধারণা নিয়ে চিন্তার অবকাশ থাকতো যদি দেখতাম যারা টিজড হচ্ছে তাদের ৮০-৯০ শতাংশই আমাদের সংস্কৃতি বা ধর্মীয় পরিপন্থী কোন পোশাক পড়লেই হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা তো তা না, সালওয়ার কামিজ বা শাড়ি দুটোই আমাদের দেশে শালীন পোশাক বলেই পরিচিত। তো এই শালীন পোশাক পড়েই তো মানুষ বেশি হেনস্থার শিকার হচ্ছে। তাইলে অশালীন পোশাকের যুক্তি টিকল কি? অনেকে আবার এক কাঠি সরেস। তারা বলে কেউ যদি খুব অশ্লীল ভাবে শাড়ি পড়ে বা জামা পড়ে, তাহলে শাড়ি বা সালওয়ার কামিজ শালীন পোশাক হওয়া সত্ত্বেও সেটি সেই মেয়ের কারণে অশ্লীল হয়ে যায়। তাদের বলছি, আপনারা একটি টিউটোরিয়াল এর ব্যবস্থা করুন, সবাই দেখুক, শিখুক কিভাবে শালীন উপায়ে শাড়ি পড়তে হয়, জামা পড়তে হয়। আপনাদের কি মনে হয়, শালীনতার সমস্ত বিদ্যা কি শুধুই পুরুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে? মেয়েরা কি ঘুম থেকে উঠেই প্রার্থনা করতে বসে যাতে সে অশালীন পোশাকে বের হতে পারে এবং তা উপভোগ করে কোন হায়েনা অশ্লীল মন্তব্য করে। হিন্দি-বাংলা সিনেমা দেখে হয়ত অনেকেই অনেক কিছু ভাবেন, কিন্তু জেনে রাখুন, একটি মেয়েও কিন্তু এই সব হেনস্থা পছন্দ করেনা। একটি ছেলে যদি ইভ টিজার হয়, তার সাথে যে কোন ধরনের সম্পর্কে যেতেই যে কোন মেয়ের আপত্তি থাকবে। অনেকে হয়ত ভাবছেন, আমরা কি টি-শার্ট/জিন্স পড়লে তাকে টিজ করা আমরা গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নিচ্ছি? মোটেও না। এই লেখার শেষের দিকে আমরা এই ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব।

এরপরে আসি, ধর্মীয় পোশাক। ধরে নেই, আমাদের দেশের সব মুসলিম নারী বুরখা/হিজাব পড়া শুরু করল। আমাদের বুঝতে হবে এই পোশাক গুলো তো শুধুই মুসলিমদের জন্য, আমার দেশে প্রায় ২ কোটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষও আছে, যাদের প্রায় ১ কোটি নারী। আমরা যদি সবাই এটাই মেনে নেই যে বুরখা/হিজাব না পড়লে সেই মেয়েকে টিজ করা জায়েজ, বুঝতে পারছেন এই চিন্তার সাথে সাথেই আমরা আমাদের সংখ্যালঘু সকল নারীকে মনে মনে একটা নির্যাতনের লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছি। একটি শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে এই ধরনের চিন্তা ভাবনা ঠিক কতটুকু সহায়ক? আর একটা জিনিস মাথায় রাখুন, এই বুরখা/হিজাব পড়েও কিন্তু মেয়েদের যেখানে-সেখানে হাত বুলানোর প্রানান্তকর চেষ্টা নপুংশকরা নিউমার্কেট বা গাউছিয়াতে করছে। অনেকে হয়ত ভাবছেন, বুরখা/হিজাব পড়ে তো মাত্র ১৫ শতাংশ মেয়ে টিজড হয়েছে, তাদের জন্য বলছি যে ভালো করে দেখুন, ফতুয়া পড়েও কিন্তু মাত্র ১৬ শতাংশ টিজড হয়েছে। বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রই বুঝতে পারে যে, এই কম সংখ্যক নারী এই পোশাক পড়ে টিজড হবার জন্য এই পোশাক গুলোর খুব সম্ভবত কৃতিত্ব নেই, বরং কম মানুষ এই পোশাক পড়ে, তাই জরিপে কম মানুষের কথাই এসেছে। বুরখা পড়েও মানুষ কি ধরনের বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে তা আমাদের সর্বশেষ স্ট্যাটাস দেখলেই টের পাবেন। আর আপনি যদি মুসলিম হয়ে থাকেন, তাহলে বলছি, আল্লাহ্‌ আপনাকে আপনার দৃষ্টিও সংযত রাখতে বলেছেন। এই কাজটির দিকে বেশি করে মনোযোগ দিন, নিজেরা প্রতিজ্ঞা করুন যে মেয়েরা আপনাদের দৃষ্টিতে অশালীন পোশাক পড়ে বের হবে, তাদের দিকে ফিরেও তাকাবেন না। তাই মেয়েদের যত্র তত্র পোশাকের ব্যাপারে জ্ঞান না দিয়ে নিজদের দৃষ্টি সংযত কিভাবে করা যায় সেইটা নিয়ে ভাবুন, সেইটা নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলুন।

সবচাইতে আসল কথাটি হল, শালীনতাকে স্টান্ডারডাইয করা যায়না, কারো কাছে শাড়ি অশালীন, কারো কাছে বুরখা ব্যতিত এমনকি হিজাবও অশালীন। কারো কাছে ঘরের বাইরে নারীদের অবস্থানই হয়ত অশালীন। পোশাক নিয়ে এই পুরো আলোচনাটাই তাই সময়ের একটা অপচয় বলতে পারেন। যারা শুধু অশালীন পোশাক পোশাক করেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনার ভাই যদি কোন মেয়েকে টিজ করে আসে, তাকে কি কষে একটা চড় লাগাবেন নাকি জিজ্ঞেশ করবেন যে মেয়েকে টিজ করে এসেছিস সেই মেয়ের পোশাক কি ছিল? আমরা কখনোই কোনভাবেই মেয়েদের পোশাক কে ‘ইভ টিজিং’ এর আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাইনা। কারণ তাইলে এই অশালীন পোশাকই হবে খুব সাধারণ হাতিয়ার ইভ টিজারদের জন্য। যে যার খেয়াল খুশি মত বলে বসবে ওই মেয়ে অশালীন পোশাক পড়ছে, তাই টিজ করছি। সেই ইভ টিজারের কাছে যদি এখন সালওয়ার কামিজ/শাড়ি কে অশালীন পোশাক বলে মনে হয়, এর বিরুদ্ধে আপনি কি বলবেন?

সবশেষে বলি, অনেকের প্রবল বিশ্বাস(এবং এই বিশ্বাস ভয়াবহ ভাবেই অনেকের), একটা মেয়ে টি-শার্ট/জিন্স পড়লে তাকে অন্তত কিছু ইঙ্গিত করাই যায় কারণ she’s basically asking for it. মানছি যে সংস্কৃতি গত ভাবে টি-শার্ট ঠিক আমাদের বাঙালি মেয়েদের পোশাক নয়। মনে রাখতে হবে, সালওয়ার কামিজের উদ্ভাবকও কিন্তু আমরা নই। সংস্কৃতি এর আপন নিয়মেই পরিবর্তনশীল। সংস্কৃতি কোন বদ্ধ সিন্দুক নয় যে নতুন কিছু এতে অনুপ্রবেশ করতে পারবেনা। আমরা অনেকেই কিন্তু ফ্রান্সের হিজাব নিশিদ্ধকরনের তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমাদের ধর্মীয় অনুভুতির জায়গাটা থেকে, কিন্তু আমাদের কি এই প্রতিবাদ করা মানায়? আমরা বিশ্বাস করি কে কোন পোশাক পড়ে রাস্তায় বের হল  তা নিয়ে রাষ্ট্রের কোন ভূমিকা থাকা উচিত নয়। ফ্রান্স যেমন খুব সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিয়ে হিজাব নিষিদ্ধ করলো, আমাদের দেশে সরকারি কোন আইন না থাকলেও আমাদের চিন্তাটাও কিন্তু এরকম যে বাংলাদেশে নিরাপদে থাকতে হলে তোমাকে এদেশের সংস্কৃতির বেঁধে দেয়া নিয়মেই আবদ্ধ থাকতে হবে।(যদিও এগুলো মেনেও নিরাপদ থাকা যায়না) আসুন না আমরা দেখিয়ে দেই, উন্নয়নের দিক থেকে হয়ত ফ্রান্স আমাদের চেয়ে এগিয়ে, কিন্তু উদারতার দিক থেকে আমরা যোজন যোজন এগিয়ে। আর তা যদি না পারি, তাইলে পাশ্চাত্তে যতই হিজাব নিষিদ্ধ করুক, আমাদের প্রতিবাদ করার অধিকারের জায়গাটা একটু নড়বড়ে হয়ে যায়।

এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম, সেখানকার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। পরিচিত একজনের বাসায় রাতের দাওয়াত খেয়ে একদিন হোটেলে ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেল। রাত ১২ টার দিকে নিউইয়র্ক সাবওয়ে স্টেশনে আমি আর আমার এক বন্ধু ঢুকলাম, ঢুকে দেখি শুধু একটা মেয়ে স্টেশন এর পরবর্তী সাবওয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। মেয়েটির পড়নে ছিল শর্ট স্কারট, কানে হেডফোন লাগিয়ে এক মনে শুধু গান শুনছিল। কিছুক্ষন পর ৪-৫ জন ছেলে হই হই করতে করতে স্টেশনে আসলো। আমরা দুই বন্ধুই একটু ভয় পেয়ে গেলাম, কারণ পকেটে বেশ কিছু ডলার ছিল তখন। যাই হোক, আমাদের অবাক করে দিয়ে ছেলেগুলো আমরা তো দুরের কথা, মেয়েটির দিকেও ফিরেও তাকালোনা। আমি বলছিনা যে ওই দেশে ধর্ষণ-ছিনতাই-রাহাজানি হয়না, কিন্তু আমার যে জিনিসটি ভালো লেগেছে যে অত রাতেও ঘুরে বেড়াতে ওই মেয়েটি ভয় পায়নি। এই যে সাহস, এই যে নির্ভরতা আর আত্মবিশ্বাস সেই মেয়েটি দেখাতে পারল, আমাদের দেশে কি এইটা চিন্তা করা সম্ভব? দিন দুপুরে আমাদের দেশে মেয়েরা যেভাবে টিজড হয়, সেখানে এইসব চিন্তা আসলে বিলাসিতা।

আমরা কোন পোশাকেরই বিরোধিতা করছিনা, যারা মনে করেন সব কিছু পড়ার অনুমতি দিলেই মেয়েরা সব বিকিনি পড়ে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াবে, তাদের বলছি, ছেলেদের তো বলতে গেলে সব কিছুই শালীন বলে আপনারা মেনে নিয়েছেন, কই তারা তো নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে না? এ কথা শুনে আবার কেউ বলে উঠবে, আরে মেয়ে জাত টাই খারাপ, এরা তাই করবে। মনে রাখবেন, আপনার মা, বোন, কন্যা কিন্তু নারী। তাই এই জাত টাকে খারাপ বলার আগে একটু ভেবে নিবেন। কি পোশাক পড়ে মেয়েরা রাস্তায় বের হবে, এই দায়িত্ব আমরা নিতে রাজি না, এই সিদ্ধান্ত মেয়েদেরই নিতে দিন এবং তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট যোগ্য হবারই কথা কারণ পুরুষের মত তারাও মানুষ, ভাল-মন্দ তারাও আমাদের মতই ঠিকই বুঝতে পারে।

শত শত বছর আগে শেখ সাদি বুঝেছিলেন যে পোশাক দিয়ে মানুষকে বিচার করা উচিত নয়, আর এই ২০১৫ সালে এসেও যদি আমাদের মানুষকে আবারও এই কথাটিই অনেক যুক্তি-তর্ক দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হয়, এইটা একটু হলেও হতাশার তো বটেই।

 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s